সমাস নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা। সমাস এর শর্টকাট টেকনিক।

সমাস নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা। সমাস এর শর্টকাট টেকনিক।

Aug 25, 2024 - 15:56
 0  34
সমাস নিয়ে গুরুত্বপুর্ণ আলোচনা। সমাস এর শর্টকাট টেকনিক।

সমাস কাকে বলে?

অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠন প্রক্রিয়াকে সমাস

  • দুই বা ততোধিক শব্দের সমন্বয়ে নতুন অর্থবোধক পদ সৃষ্টি হয়।
  • পদের বিভক্তি লোপ পায়

 

 বৈশিষ্ট্য

অর্থসম্বন্ধ আছে এমন একাধিক শব্দের এক সঙ্গে যুক্ত হয়ে একটি নতুন শব্দ গঠনের প্রক্রিয়া কে সমাস বলে। যেমন – দেশের সেবা= দেশসেবা

  • পাশাপাশি দুই বা তার অধিক শব্দ থাকতে হবে।
  • এসব শব্দের মধ্যে অর্থসঙ্গতি থাকতে হবে।
  • নতুন শব্দ গঠন করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

 

প্রয়োজনীয়তা

  • অনেক নতুন শব্দ গঠন করা যায়।
  • ভাষাকে সহজ-সরল, সংক্ষিপ্ত, প্রাঞ্জল ও শ্রুতিমধুর করা যায়।
  • অল্প কথায় ব্যাপক ভাব প্রকাশ করা যায়।
  • সহজভাবে শব্দ উচ্চারণ করা যায়।
  • বক্তব্যকে সুন্দর, শ্রুতিমধুর, সংক্ষিপ্ত, সহজ-সরল, অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ করা যায়।
  • বাক্যকে গতিশীল করা যায়।

 

উপাদান (ব্যাখ্যা)

বিলাতফেরত রাজকুমার সিংহাসনে বসলেন।

  • এখানে বিলাতফেরত, রাজকুমার রাজকুমার ও সিংহাসন   তিনটিই সমাসবদ্ধ পদ।
  • এগুলোর গঠন প্রক্রিয়া: বিলাত হতে ফেরত, রাজার কুমার, সিংহ চিহ্নিত আসন –  এগুলো হলো ব্যাসবাক্য।
  • এসব ব্যাসবাক্যে বিলাত, ফেরত, রাজা, কুমার, সিংহ, আসন হলো একেকটি  সমস্যমান পদ।
  • আর বিলাতফেরত, রাজকুমার, সিংহাসন সমস্ত পদ।
  • বিলাত, রাজা ও সিংহ হলো পূর্বপদ আর ফেরত, কুমার ও আসন হলো পরপদ।

 

প্রকারভেদ

  •  দ্বন্দ্ব 
  • দ্বিগু 
  • কর্মধারয় 
  • তৎপুরুষ 
  • বহুব্রীহি 
  • অব্যয়ীভাব 

 

সমাস

 

দ্বন্দ্ব সমাস

যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন: মা ও বাবা=মা-বাবা। দ্বন্দ্ব সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়:

  • মিলনার্থক শব্দযোগে: মা-বাপ, মাসি-পিসি, ইত্যাদি।
  • বিরোধার্থক শব্দযোগে: দা-কুমড়া, অহি-নকুল, স্বর্গ-নরক ইত্যাদি।
  • বিপরীতার্থক শব্দযোগে:  আয়-ব্যয়, জমা-খরচ ইত্যাদি।

 

দ্বিগু সমাস

সমাহার (সমষ্টি) বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় তাকে দ্বিগু সমাস বলে।

  • দ্বিগু সমাসে সমাসনিষ্পন্ন পদটি বিশেষ্য পদ হয়। যেমন: তিন কালের সমাহার = ত্রিকাল।

 

কর্মধারয় সমাস

যেখানে বিশেষণ বিশেষণ বা বিশেষণভাবাপন্ন পদের সাথে বিশেষ্য বা বিশেষ্যভাবাপন্ন পদের সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রধানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।  যেমন: নীল যে পদ্ম = নীলপদ্ম।

কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকারে সাধিত হয়। যেমন:

  •  দুটি বিশেষণ পদে একটি বিশেষ্যকে বোঝালে। যেমন: যে চালাক সেই চতুর=চালাক-চতুর।
  • দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝালে। যেমন: যিনি জজ তিনিই সাহেব=জজ সাহেব।
  • কার্যে পরম্পরা বোঝাতে দুটি কৃদন্ত বিশেষণ পদের কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন: আগে ধোয়া পরে মোছা = ধোয়ামোছা।

 

কর্মধারয় সমাস কয়েক প্রকার। যথা-

 

মধ্যপদলোপী কর্মধারয় শব্দযোগ  উপমান কর্মধারয়    উপমিত কর্মধারয়  রুপক কর্মধারয় 
যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদের লোপ হয় তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। সাধারণ ধর্মবাচক পদের সাথে উপমানবাচক পদের যে সমাস হয় তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। সাধারণ গুণের উল্লেখ না করে উপমেয় পদের সাথে উপমানের যে সমাস হয় তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে।  উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভিন্নতা কল্পনা করা হলে রূপক কর্মধারয় সমাস হয়।
যেমন: স্মৃতি রক্ষার্থে সৌধ= স্মৃতিসৌধ। যেমন: তুষারের ন্যায় শুভ্র=তুষারশুভ্র। যেমন: মুখ চন্দ্রের ন্যায়= চন্দ্রমুখ। যেমন: মন রূপ মাঝি= মনমাঝি।

 

তৎপুরুষ সমাস

পূর্বপদের বিভক্তির লোপে যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বোঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: মন দিয়ে গড়া = মনগড়া। তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার:

  • দ্বিতীয়া তৎপুরুষ 
  • তৃতীয়া তৎপুরুষ
  • চতুর্থী তৎপুরুষ
  • পঞ্চমী তৎপুরুষ
  • ষষ্ঠী তৎপুরুষ
  • সপ্তমী তৎপুরুষ
  • নঞ্ তৎপুরুষ
  • উপপদ তৎপুরুষ
  • অলুক তৎপুরুষ

 

 

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ: পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে) ইত্যাদি লোপ হয়ে যে সমাস হয় তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: দুঃখকে প্রাপ্ত=দুঃখপ্রাপ্ত, বিপদকে আপন্ন=বিপদাপন্ন

তৃতীয়া তৎপুরুষ: উপকরণবাচক বিশেষ্য পদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন: স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত = স্বর্ণমণ্ডিত।

চতুর্থী তৎপুরুষ: পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, জন্য, নিমিত্ত ইত্যাদি) লোপে যে সমাস হয় তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি, আরামের জন্য কেদারা= আরামকেদারা।

নঞ্ তৎপুরুষ : না বাচক নঞ্ অব্যয় (না, নেই, নাই, নয়) পূর্বে বসে যে তৎপুরুষ সমাস হয় তাকে নঞ্ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন: ন আচার=অনাচার, ন কাতর=অকাতর। 

 

বহুব্রীহি সমাস 

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ না বুঝিয়ে অন্য কোনো পদকে বোঝায় তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। যেমন: বহু ব্রীহি (ধান) আছে যার = বহুব্রীহি।

  • বহুব্রীহি সমাসে সাধারণত যার, যাতে ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যরূপে ব্যবহৃত হয়। যেমন: আয়ত লোচন যার = আয়তলোচনা (স্ত্রী), মহান আত্মা যার= মহাত্মা।
  • সহ কিংবা সহিত শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে সহ ও সহিত এর স্থলে স হয়। যেমন: বান্ধবসহ বর্তমান = সবান্ধব।

 

বহুব্রীহি সমাস আট প্রকার। যথা:

  • সমানাধিকরণ
  • ব্যাধিকরণ
  • ব্যতিহার
  • নঞ
  • মধ্যপদলোপী
  • প্রত্যয়ান্ত
  • অলুক 
  • সংখ্যাবাচক বহুব্রীহি।

 

অব্যয়ীভাব সমাস 

পূর্বপদে অব্যয়যোগে নিষ্পন্ন সমাসে যদি অব্যয়েরই অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে। যেমন: জানু পর্যন্ত লম্বিত (পর্যন্ত শব্দের অব্যয় আ)= আজানুলম্বিত (বাহু), মরণ পর্যন্ত=আমরণ।

 

What's Your Reaction?

like

dislike

love

funny

angry

sad

wow